কীর্তিনারায়ন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা দৈনিক মাতৃভূমি পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক বীর মুক্তিযুদ্ধা (মেজর অবঃ) সুরঞ্জন দাশ (৭৫) তাঁর স্ত্রী সুর্পণা দাশ (৭২) সহ কানাডার ভাঙ্কুভার শহরে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
কীর্তিনারায়ন কলেজে শিক্ষকদের সাথে মেজর সুরঞ্জন দাশ ও সুপর্ণা দাশ
কানাডার স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে কানাডার ভেরনন এর একটি ক্যাডেট ক্যাম্পের কাছে এ দুর্ঘটনাটি সংঘটিত হয়।
তার মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সর্বমহলে শোকের ছায়া নেমে আসে।
কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানাযায়, মেজর (অবঃ) সুরঞ্জন দাস স্বস্ত্রীক কানাডার একটি শহরে বেড়াতে যান। সেখান থেকে শুক্রবার কানাডার স্থানীয় সময় সকাল ১০ টা বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টায় নিজস্ব গাড়ী যোগে বাসায় ফেরার পথে কানাডার ভেরনন এর একটি ক্যাডেট ক্যাম্পের কাছে পৌছামাত্র পিছন দিক থেকে একটি লরি গাড়ী সজোরে ধাক্কা দিলে মেজর (অবঃ) সুরঞ্জন দাশের গাড়ীটি ধুমড়ে মুছড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান নবীগঞ্জ উজেলা তথা সিলেট বিভাগের কৃতি সন্তান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী মেজর সুরঞ্জন দাশ তার স্ত্রী সুর্পণা দাশ।
বর্তমানে কানাডা পুলিশের হেফাজতে মৃতদেহ দুটি রয়েছে। তবে লাশ স্বদেশে আসবে কি না এ ব্যাপারে রির্পোট লেখা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সকলের প্রিয় মুখ বীর মুক্তিযোদ্ধ মেজর (অবঃ) সুরঞ্জন দাশ স্বস্ত্রীক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
শোকাহত কীর্তিনারায়ন কলেজ পরিবার
বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শোক প্রকাশ করেছেন।
কলেজে বক্তব্য প্রদানকালে মেজর সুরঞ্জন দাশ পাশে রয়েছেন সুপর্ণা দাশ
উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের গুমগুমিয়া গ্রামের কীর্তিনারায়ন দাশ ও সেমাঙ্গীনি দাশের পুত্র সুরঞ্জন দাশ ১৯৫১ইং সালের ১৫ জুন গুমগুমিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। পরে তিনি ভারতের মেঘালয়ে অবস্থিত ইকো-ওয়ান প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিতে সীমান্ত অতিক্রম করে ৫ নম্বর সেক্টরের অধীনে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন।
এ কারণে পাকিস্তানি সেনারা তার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে সবকিছু জ্বালিয়ে দেয় এবং তার ভাই ও বৃদ্ধ খালুসহ অনেক আত্মীয়স্বজনকে হত্যা করে। যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হলে সুরঞ্জন দাশ এক সময় সেকেন্ড লেপ্টেন্যন্ট হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেনাবাহিনীতে অত্যন্ত সুনামের সহিত চাকুরী করেন। পরবর্তীতে তিনি সর্বশেষ মেজর পদে পদোন্নতি লাভের পর ১৯৮২ইং সালে একমাত্র বাঙালী সেনা অফিসার হিসেবে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যান এবং সেখানে ১৮ মাস অবস্থান করেন। ১৯৮৪ইং সালে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৮৭ইং সালের জুন মাসে স্বেচ্ছায় অকালীন অবসর গ্রহন করেন। পরে ১৯৮৮ইং সালের ২৩ জুন পরিবারের সকলকে নিয়ে আমেরিকা চলে যান। সেখানে কিছু দিন থাকার পর তিনি স্বপরিবারে কানাডা চলে যান। সর্বশেষ তিনি পরিবারের সকলকে নিয়ে কানাডাতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছিলেন।
কীর্তিনারায়ন কলেজে ১মিনিট নিরবতা পালন করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শোক প্রকাশ
তিনি বিয়ে করেন খুলনা জেলায়। তার স্ত্রী সুপর্ণা দাশও একজন উচ্চ শিক্ষিত মহিলা ছিলেন। মাস্টার্স পাশ করা সুপর্ণা দাশ কানাডায় চাকুরী করতেন ভ্যঙ্কুভার এয়ারপোর্টে। তাদের ৩ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তান রয়েছে।
ছেলে মেয়েরাও যার যার অবস্থানে আছে সগৌরবে। বড় মেয়ে শর্মিষ্টা দাশ সুমি পেশায় একজন ডাক্তার। সে এম.ডি. ও এফ.আর.সি.এস. ডিগ্রিধারী। দ্বিতীয় মেয়ে শাওন দাশ একজন নামকরা ব্যারিষ্টার। দু’জনেই বিবাহিত। তাদের স্বামীরাও উচ্চ শিক্ষিত। তাদের একমাত্র ছেলে অবিবাহিত রাহুল দাশও পেশায় একজন ডাক্তার। সার্জারীতে অভিজ্ঞ রাহুলও এম.ডি. ও এফ.আর.সি.এস. ডিগ্রীধারী। তার সব ছোট মেয়ে শ্যামা দাশও এম.ডি. ও এফ.আর.সি.এস. ডিগ্রিধারী একজন নামকরা ডাক্তার সেও বিবাহিত।
নবীগঞ্জ উপজেলার ভাটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত জগন্নাথপুর, সোনাপুর, হলিমপুর, আমড়াখাই,শৈলা রামপুরসহ ওই এলাকার বাচ্ছাদের উচ্চ শিক্ষার কথা চিন্তা করে সেখানে তার পিতা কীর্তিনারায়ন দাশের নামে একটি মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্টা করেন।
এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব:) সুরঞ্জন দাশ ও তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা দাশের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপি,জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, হবিগঞ্জ-২ নবীগঞ্জ বাহুবল আসনের এমপি শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী, সাবেক এমপি আলহাজ্ব শেখ সুজাত মিয়া, নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমদ চৌধুরী, প্যানেল মেয়র জায়েদ চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক লোকমান আহমদ খান, আনোয়ার হোসেন মিঠু, এটিএম সালাম, মোঃ আলমগীর মিয়াসহ রাজনৈতিক, সাংবাদিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ।
তারা সংবাদপত্রের প্রদত্ত বিববৃতিতে মরহুম ২ জনের আত্মার শান্তি কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবর্বার বর্গের প্রতি গভীর সমবেনা জ্ঞাপন করেন।
এছাড়াও বীর এই সেনানীর মৃত্যুতে নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি শোক প্রকাশ করেছেন। আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাসদ, বাসদ, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতারা সুরঞ্জন দাশের মৃত্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকাহত পরিবার বর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
Leave a Reply