1. admin@hvoice24.com : admin :
রবিবার, ১১ জুন ২০২৩, ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর ঐতিহাসিক জনসভা-হবিগঞ্জ ভয়েস২৪ সিলেটের ঐতিহ্য ‘আসাম টাইপ বাড়ি’-হবিগঞ্জ ভয়েস২৪ জলাবদ্ধতা নিরসনই সিলেট সিটিতে বড় চ্যালেঞ্জ-হবিগঞ্জ ভয়েস২৪ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল আজ,মহারণে বিশ্বকাপ জয়ী মার্টিনেজ না আলভারেজ-কে জিতবে? ছাত্রদলের কমিটিতে নেই চোখ হারানো সাইদুর,ক্ষোভ-‘আমার চোখটা ফেরত চাই’ নবীগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্থ ১২ পরিবারের পাশে আব্দুল হক তালুকদার ফাউন্ডেশন-হবিগঞ্জ ভয়েস২৪ মাধবপুরে মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতা আটক- হবিগঞ্জ ভয়েস২৪ সিলেটে নিহতদের পরিবার পেলো দুই লাখ,আহতরা ৫০ হাজার টাকা বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটারের নাটক ‘অচলায়তনের অপ্সরী’ মঞ্চায়ন হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা,সভাপতি রিংগন,সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর

মানুষ গরিব-অসহায় হলেই তাকে অমর্যাদা করা উচিত?

সম্পাদকীয়
  • প্রকাশিত : রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ২০০ বার পঠিত

মানুষ গরিব কিংবা অসহায় হলেই কিন্তু মূল্যহীন হয়ে যায় না। তাদেরও রয়েছে সামাজিক মর্যাদা। সাধারণত গরবি ও অসহায় মানুষকে সমাজের লোকজন নিচু দৃষ্টিতে দেখে আর মর্যাদা পায় ক্ষমতাধর সম্পদশালীরা আল্লাহর কাছে ধন-সম্পদ কিংবা ক্ষমতাই মর্যাদার মাপকাঠি নয়। তাহলে আল্লাহর কাছে মর্যাদার মাপকাঠী কী? এ সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্যই বা কী?

সময় ও অবস্থার আলোকে সমাজের কাছে গরিব-অসহায় মানুষ মূল্যহীন হলেও আল্লাহর কাছে তারা মর্যাদাবান। যদি তারা হতে পারে মুত্তাকি বা পরহেজগার। যদি তাদের হৃদয়ে থাকে আল্লাহর ভয়। কেননা আল্লাহর ভয় মানুষকে পথহারা হতে দেয় না। তাইতো কবি গেয়েছেন গান-‘যাদের হৃদয়ে আছে আল্লাহর ভয়, তারা কভু পথ ভুলে যায় না;আল্লাহর প্রেম ছাড়া এই দুনিয়ায়, কারো কাছে কোনো কিছু চায় না।রাতের আঁধারে যারা সেজদাতে রয়, দুচোখের অশ্রুতে নদী যেন বয়।ছলনার হাতছানি যতই আসুক, পেছনে ফিরেও সে তাকায় না।’

আল্লাহর কাছে মর্যাদার মূলভিত্তিই হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়। ধনী-গরিব, সম্পদশালী-অসহায় কোনোটিই মর্যাদার মানদণ্ড নয়। তাকওয়াবান নেককার ব্যক্তির মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি, হতে পারে সে গরিব কিংবা ধনী।

গরিব-অসহায় মানুষেরও রয়েছে মর্যাদা। এ মর্যাদা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি মৃত্যু-দাফন এবং পরবর্তী জীবনেও রয়েছে। ইসলামে এ সম্পর্কে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা।

সমাজের চোখে মানুষ গরিব কিংবা অসহায় হলে দাম দেয়া হয় না। অভাবে জর্জরিত মানুষ সম্পদশালীর কাছে অবহেলিত, অবজ্ঞার পাত্র। দুর্বল কিংবা অসহায় ব্যক্তি সঠিক পথে থাকলেও সমাজের একশ্রেণীর মানুষ তাদের পক্ষে কথাও বলতে চায় না। তাদের ন্যূনতম সান্ত্বনা দেয়ারও কেউ থাকে না। মানুষের সহযোগিতা থাক দূরের কথা এরা মানুষ হিসেবে অন্য মানুষের ভালোবাসা থেকেও হয় বঞ্চিত। অথচ বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসহায় মানুষের সহায় হওয়ার প্রতি গুরুত্বারো করেছেন। হাদিসে এসেছে-হজরত আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘আমার বন্ধু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে সাত কাজের নির্দেশ দিয়েছেন– আমি যেন গরিব-মিসকিনকে ভালোবাসি ও তাদের নৈকট্য (ভালোবাসা) লাভ করি।- আমি যেন ওই ব্যক্তির দিকে তাকাই, যে আমার চেয়ে নিম্ন স্তরের এবং ওই ব্যক্তির দিকে না তাকাই, যে আমার চেয়ে উচ্চ পর্যায়ের।- আমি যেন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করি, যদিও তারা একে ছিন্ন করে।- আমি যেন কারো কাছে কোনো কিছু প্রত্যাশা না করি।- আমি যেন সর্বদা ন্যায় ও সত্য কথা বলি, যদিও তা তিক্ত হয়।- আমি যেন আল্লাহর ব্যাপারে কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় না করি। এবং- তিনি আমাকে এই নির্দেশই দিয়েছেন যে আমি যেন বেশিরভাগ সময় পড়ি-لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِউচ্চারণ : ‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি বা কোনো ভরসা নেই।’ কেননা এই শব্দগুলো আরশের নিচের ভাণ্ডার থেকে আগত।’ (মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত, ইবনে হিব্বান)

আল্লাহর কাছে গরিব ও দুর্বলের মর্যাদা অনেক বেশি। তাদের কারণেই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে দুনিয়ার অনেক নেয়ামত দান করে থাকেন। হাদিসের বর্ণনায় তা প্রমাণিত। তাহলো– রিজিক লাভআল্লাহ তাআলা গরিব, দুঃখী ও দুর্বলদের কারণেই দুনিয়ায় বান্দাকে রিজিক দিয়ে থাকেন। হজরত সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার নিজেকে নিম্ন শ্রেণীর মানুষের চেয়ে মর্যাদাশীল মনে করায় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-‘দুর্বল লোকদের দোয়ায় তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক দেয়া হয়।’ (বুখারি, মিশকাত)

– সম্পদহীনরাই জান্নাতিবেশির ভাগ সম্পদহীন ব্যক্তিরাই হবে জান্নাতের অধিবাসী। কেননা সম্পদশালী সাধারণত আল্লাহকে তুলনামূলক কম ভয় করে। আর তারা অহংকারীও হয় না। গরিবরাই আল্লাহকে বেশি ভয় করে। আল্লাহ তাআলা তাকে ভয়কারীদের জান্নাত দেয়ার ওয়াদা করেছেন এবং জান্নাত দেখিয়ে এর সুসংবাদ দিয়েছেন এভাবে– ‘জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে খোদাভীরুদের অদূরে। তোমাদের প্রত্যেক অনুরাগী ও স্মরণকারীকে এরই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। যে না দেখে দয়াময় আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করত এবং বিনীত অন্তরে উপস্থিত হতো।’ (সুরা ক্বাফ : আয়াত ৩১-৩৩)

– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্রাম বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের জান্নাতিদের সম্পর্কে অবহিত করব না? (তারা হলো) প্রত্যেক দুর্বল ব্যক্তি এবং এমন ব্যক্তি, যাকে দুর্বল মনে করা হয়। সে যদি আল্লাহর নামে কসম করে, তাহলে তা তিনি পূর্ণ করে দেন। (তিনি আরো বলেন) আমি কি তোমাদের জাহান্নামিদের সম্পর্কে অবহিত করব না? (তারা হলো) প্রত্যেক রূঢ় স্বভাব, কঠিন হৃদয় ও দাম্ভিক ব্যক্তি।’ (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত)।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘আমি জান্নাতে উঁকি মেরে দেখলাম যে এর বেশির ভাগ অধিবাসী হলো গরিব-মিসকিন। আর জাহান্নামে দেখলাম যে এর বেশির ভাগ নারী।’ (মুসলিম ও মিশকাত)

গরিব, দুর্বল ও অসহায়ের জন্য সবচেয়ে বড় সুখবর হলো-দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে মূল্যহীন থাকলেও আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনে তারা ধনীদের তুলনায় পাঁচশত বছর আগে জান্নাতে যাবে। এমনটিই বলেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দরিদ্র মুহাজিররা তাদের ধনীদের চেয়ে ৫০০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তা হলো (আখেরাতের) অর্ধদিনের সমান।’ (তিরমিজি)।

মুমিনের করণীয়সুতরাং গরিব-দুর্বলের ব্যাপারে মুমিন মুসলমানের করণীয় হলো, তাদের অবমূল্যয়ন ও হেয়জ্ঞান করা যাবে না। তাদের ব্যাপারে না করা। তাদের ব্যাপারে যে বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি, তাহলো– অবজ্ঞা না করাগরিব ও দুর্বল হওয়ার কারণে তাদের প্রতি অবজ্ঞা-অবহেলা না করা। কুরআনুল কারিমে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখো, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের রবকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিও না।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ২৮)।

– গরিবের প্রতি দৃষ্টি দেয়াসব মানুষের উচিত ও নৈতিক দায়িত্ব হলো নিজ অবস্থানের চেয়ে নিন্ম স্তরের মানুষের দিকে দয়ার দৃষ্টি দেয়া। নিজের চেয়ে উচ্চ স্তরের কোনো ব্যক্তি বা তার সম্পদের দিকে আক্ষেপের দৃষ্টিতে না তাকানো বরং নিম্ন স্তরের মানুষের দিকে তাকিয়ে নিজের অবস্থার জন্য মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। হাদিসে এসেছে-হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ এমন ব্যক্তির দিকে দেখে, যাকে ধন-সম্পদে, স্বাস্থ্য-সামর্থ্যে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা হয়েছে, তখন সে যেন নিজের চেয়ে নিম্নমানের ব্যক্তির দিকে তাকায়।’ (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত)।

– অল্পে সন্তুষ্ট থাকাযে কোনো অবস্থায় মুমিনের উচিত, অল্পে সন্তুষ্ট থাকা। বেশি আশা না করা। আল্লাহর দেয়া হালাল জীবিকা যত অল্পই হোক; তাতে সন্তুষ্ট থাক এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। তবেই দুনিয়ার ধন-সম্পদের মোহ তাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনে, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সুস্থ দেহে পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে সকালে উপনীত হয় এবং তার কাছে যদি সারা দিনের খোরাকি থাকে, তাহলে তার জন্য যেন গোটা দুনিয়া একত্রিত করা হলো।’ (ইবনে মাজাহ)।

মনে রাখতে হবে মানুষ গরিব-দুর্বল হলেই তাকে অমর্যাদা করা উচিত নয়; কারণ দুনিয়া যিনি মানুষের কাছে মূল্যহীন হতে সে মহান রবের কাছে অনেক মর্যাদাবান। কেনন কুরআনের ঘোষণায় আল্লাহর ভয়ই মানুষকে মর্যাদার সর্বোচ্চ স্তরে পৌছে দেয়। সে হয়ে ওঠে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত। তার জন্য ওয়াদা হচ্ছে চিরস্থায়ী জান্নাত।আল্লাহ তাআলা বিশ্ব মানবতার সবাইকে গরিব ও দুর্বলদের প্রতি ভালো ও উত্তম আচরণ করার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা