মুমিন মুত্তাকি ব্যক্তি পার্থিব জীবনের সুখ-শান্তি, ভোগ-বিলাসে মত্ত না হয়ে আল্লাহতায়ালা এবং পরকালকে ভালবাসেন।
এজন্যই মুমিন ব্যক্তি সর্বাবস্থায় আল্লাহর সন্তুষ্টির চেষ্টায় তার ইবাদত ও পুণ্য কাজে রত থাকে। কেননা আল্লাহর ইবাদতের জন্যই আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।
আমরা আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে এ ক্ষণস্থায়ী জীবনের প্রতি বেশি মনোযোগি হয়ে যাই।
অথচ হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াকে মহব্বত করল সে তার পরকালকে ক্ষতিগ্রস্ত করল। আর যে ব্যক্তি পরকালকে মহব্বত করল সে তার দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করল। সুতরাং তোমরা অস্থায়ী বস্তুর ওপর চিরস্থায়ী বস্তুকে প্রাধান্য দাও। (মুসনাদে আহমাদ, বায়হাকি, মিশকাত)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, তোমরা জেনে রেখ, এই পার্থিব জীবন ক্রীড়া কৌতুক, চাকচিক্য, সৌন্দর্য, তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক আত্মশ্লাঘা এবং ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা মাত্র।
এর দৃষ্টান্ত বারিধারার ন্যায় যার দ্বারা উৎপাদিত শাক-সবজি কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, অতঃপর তা পরিপক্ক হয় এবং তুমি তাকে হলুদবর্ণ দেখতে পাও, যা অবশেষে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।
পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং সন্তুষ্টি। এই পার্থিব জীবন সাময়িক ছলনাময়ী ভোগ-বস্তু ব্যতিরেকে কিছু নয়।’ (সুরা আল হাদিদ, আয়াত: ২০)।
অথচ আজ আমরা পার্থিব জীবনের জন্যই যখন যা ইচ্ছে তা করে যাচ্ছি।
পার্থিব জীবন প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি হজরত রাসুল (সা.)-এর খিদমতে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন যা করলে আল্লাহ আমাকে ভালবাসবেন এবং মানুষেরাও আমাকে ভালবাসবে।
তিনি (সা.) বললেন, দুনিয়া ত্যাগ কর, আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন এবং মানুষের কাছে যা আছে, তার প্রতি লালসা করো না, তবে লোকেরা তোমাকে ভালবাসবে। (মেশকাত, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)
আমরা যদি আল্লাহতায়ালার ইবাদত ভুলে দুনিয়ার লোভ-লালসায় মজে থাকি তবে কি করে আমরা পরকালের শান্তি ভোগ করবো?
মুমিন ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকেন, যার ফলে সে সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রেখে সর্বদা আল্লাহর ইবাদত এবং পুণ্যকাজ করে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন- একজন মুমিনের জন্য ইহকাল কয়েদখানা ও অবিশ্বাসীর জন্য জান্নাত। (মুসলিম)
মুমিন ব্যক্তির কাছে এই দুনিয়াটা বন্দিখানার ন্যায়, কারণ সে কোন কাজ করার আগে ভেবে নেয় এতে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা। তাই সে সব সময় সঠিক পথে চলার চেষ্টা এবং আল্লাহর ইবাদতে মত্ত থেকে পরকালের সুখময় জীবন কামনা করে।
আর দুনিয়ার পাপীষ্ঠ লোকেরা পাপ কাজ করার ক্ষেত্রে সীমা ছাড়িয়ে যায়। তারা মনেই করে না পরকালের কথা, যার ফলে তারা যত প্রকার খারাবি আছে সবই করে যায় নির্ভয়ে।
এরা খারাপ কাজ করেই ক্ষ্যান্ত হয়না বরং তারা পৃথিবীকে সারা জীবনের আবাসস্থল ভেবে এই পৃথিবীর মোহে আকৃষ্ট থাকে।
দুনিয়াদাররা আল্লাহতায়ালাকে ভয় করবে তো দূরের কথা, আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বকে নিয়েও তামাশায় মেতেছে। তাদের কাছে পার্থিব জগতটাই সব, পরকাল নিয়ে তাদের কোন চিন্তা নেই।
অথচ তারা একবারের জন্যও ভাবে না যে, বিশ্বময় মহামারি করোনার কাছে সম্পদশালী দেশও আজ নিরূপায়। তাদের অর্থের দম্ভ আর বাহ্যিকতার আজ কোনই মূল্য নেই।
তাই আমরা যদি এই ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবনের মায়া ত্যাগ করে, একবার পরকালের চিন্তা করে কাজ করি তাহলে হয়তো নিজে এবং আমাদের পরিবারগুলোকে পরকালের আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করতে পারব।
কেননা এ দুনিয়া হচ্ছে পরকালের সঞ্চয় জমানোর স্থান। আমরা যত ভালো কাজ করবো পরকালে আমাদের পাল্লা ততই ভারী হবে।
হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, দুনিয়া পেছনের দিকে চলে যাচ্ছে। আর পরকাল সামনে চলে আসছে। (মানুষের অন্তরে) এ দু’টির প্রতিটিরই রয়েছে প্রবল আসক্তি।
সুতরাং তোমরা পরকালের প্রতি আসক্ত হও। দুনিয়ায় আসক্ত হইও না। কারণ এখন (দুনিয়া) আমলের সময়; কিন্তু (কোনো) হিসাব নেই। আর আগামীকাল (পরকাল) হবে হিসাবের; সেখানে আমল করার (কোনো) সুযোগ নেই। (বোখারি)
তাই আসুন, পার্থিব ভোগবিলাসে মত্ত না হয়ে পরকালের কথা স্মরণ করে যাবতীয় মন্দ কাজ পরিহার করি আর সৎপথে জীবন যাপন করার চেষ্টা করি।
আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা এবং মহানবীর (সা.) আদর্শ অনুসরণ করে জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন, আমিন।
Leave a Reply