1. admin@hvoice24.com : admin :
শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
নবীগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্থ ১২ পরিবারের পাশে আব্দুল হক তালুকদার ফাউন্ডেশন-হবিগঞ্জ ভয়েস২৪ মাধবপুরে মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতা আটক- হবিগঞ্জ ভয়েস২৪ সিলেটে নিহতদের পরিবার পেলো দুই লাখ,আহতরা ৫০ হাজার টাকা বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটারের নাটক ‘অচলায়তনের অপ্সরী’ মঞ্চায়ন হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা,সভাপতি রিংগন,সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর ভবন গুঁড়িয়ে দিলো এসিল্যান্ড, সুকান্ত’র স্বপ্ন নিমিষেই শেষ ডাঃ মহিউদ্দিন হাই স্কুলে’র পরীক্ষা স্থগিত-হবিগঞ্জ ভয়েস২৪ স্কলার্সহোম মেজরটিলা কলেজে অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত গাজীপুরে দুই কারখানাকে দেড়লাখ টাকা জরিমানা হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সাথে বাপা নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ

রিজিক নির্ধারিত-মৃত্যু অনিবার্য!

সম্পাদকীয়
  • প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩
  • ১৩৮ বার পঠিত

পৃথিবীর বুকে অবধারিত সত্য হলো মৃত্যু। যার সূচনা হয়েছে তার সমাপ্তি ঘটবেই। এটা আল্লাহপাকের শাশ্বত বিধান। এ অমোঘ বিধানের কোন পরিবর্তন নেই। প্রত্যেক প্রাণীকে মরতে এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন,

“প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।”- সূরা আলে ইমরানঃ ১৮৫

অনিবার্য মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জীবন চলার পথে রিজিক তথা জীবিকা জীবনের অপরিহার্য উপাদান। জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবিকা ব্যতিত জীবন অসম্পূর্ণ, অচল ও অসম্ভব। কম বেশি সবার প্রয়োজনীয় জীবিকা দরকার। খাদ্য-পানীয়, সহায় সম্বল, অর্থ-কড়ি, সন্তান-সন্ততি ও ধন সম্পদ যা আমরা ভোগ করি, সবই রিজিকের অর্ন্তভূক্ত। রিজিক আল্লাহপাক নিজ অনুগ্রহে সৃষ্টিজগতকে দান করেন। আল্লাহপাক জন্মের আগে তা আমাদের ভাগ্যে বন্টন করে রেখেছেন। আমরা সর্বদা জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি। ধন-সম্পদ নিয়ে টেনশন করি। অনাগত ভবিষ্যতের চিন্তায় চিন্তিত থাকি। পরিবার-পরিজন ও ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি। টাকা-পয়শার বিষয় সামনে আসলেই ব্যতিক্রম, স্বার্থপর ও ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি। সবসময় ভাবতে থাকি আগামীতে কী করব? কী খাব? কীভাবে চলব? ইত্যাদি, ইত্যাদি।

জীবিকা প্রসঙ্গে আল্লাহপাক মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বলেন,

“পৃথিবীতে চলমান সকল প্রাণীর জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর। তিনি তাদের অবস্থানস্থল ও সংরক্ষণস্থল জানেন। সবকিছুই এক স্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে” -সূরা হুদঃ ৬।

অন্যত্র আল্লাহপাক বলেন, “কোন প্রাণীই জানে না, আগামীতে সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না, তার মৃত্যু কখন কোথায় হবে” – সূরা লোকমানঃ ৩৪।

আধুনিক ও সভ্য পৃথিবী আজ ব্যস্ত ও অস্থির দু’ জিনিসের পিছনে।
১। রিজিক তথা জীবিকার অন্বেষণ।
২। মওত তথা মৃত্যুর হাত থেকে বাচাঁর প্রাণপণ চেষ্টা।

অথচ অবধারিত সত্য হচ্ছে, এ দু’টি বিষয় অনেক আগে থেকে নির্ধারিত ও মীমাংসিত। জীবিকার জন্য মানুষ কত কিছুইনা করছে! চির সত্য হচ্ছে, জীবিকা ভাগ্যে যা লিপিবদ্ধ আছে এর বাইরে অর্জন করতে পারে না। শত সহস্র চেষ্টা করেও আল্লাহ কর্তৃক বাজেটের বাইরে যাওয়া কোনো মাখলুকের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রকৌশলীর পরিকল্পনা ও নকশার বাইরে যেভাবে নির্মাণ শ্রমিকদের যাওয়ার সুযোগ নেই, অনুরূপভাবে রব তথা আল্লাহ্‌র নকশা ও বন্টনের বাইরেও সৃষ্টিজগতের যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকারের বরাদ্দের বাইরে কোন এজেন্সি, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যেতে পারে না, অনুরূপভাবে মহান রবের বাজেট তথা বরাদ্দের বাইরেও মাখলুক যেতে পারে না। এজন্যই সচরাচর দেখা যায়, একই ব্যবসায় কেউ সফল আবার কেউ ব্যর্থ। একই কর্মে কেউ কৃতকার্য আবার কেউ অকৃতকার্য। সমান পরিশ্রম করে কেউ এগিয়ে যাচ্ছে, আবার কেউ পিছিয়ে যাচ্ছে। একই গবেষণায় কেউ সফল আবার কেউ বিফল। একই বাহনে কেউ আহত, কেউ নিহত আবার কেউ জীবিত ও সুস্থ!

জন্ম, জীবিকা, বিবাহ ও মৃত্যু এগুলো মহান রব তথা সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি, রহস্য ও নিয়ন্ত্রিত মহিমা! অতএব পরিশ্রম, চেষ্টা ও সাধনার পরও যদি কোনো কিছু অর্জন না হয় তাহলে মনে করতে হবে, রিজিক, নসিব তথা ভাগ্যে নেই। এজন্য হতাশ বা চিন্তিত হওয়া উচিত নয়। সর্বাবস্থায় আল্লাহর ফায়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকায় হচ্ছে ঈমানের দাবী।

হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেন, “গরীব মু’মিনেরা ধনীদের পাচঁ শত বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে”-তিরিমিজিঃ ২৩৫৩।

আল্লাহপাক বান্দার জন্য যা ভাল ও মঙ্গল তাই করেন। যদিওবা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের বুঝে আসে না। অন্য হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেন,

“আমি জান্নাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশই গরীব লোক। আর জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার অধিকাংশই মহিলা”-বুখারীঃ ৩২৪১।

অতএব কার বরাদ্দ কোথায় রেখেছেন তা আল্লাহই ভাল জানেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

“তোমার রব যাকে চান জীবিকা বাড়িয়ে দেন, আবার সংকুচিত করে দেন। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দাদের সব খবর রাখেন এবং সবকিছু দেখেন।” -৩০ঃ ১৭

জীবিকার পেছনে সবাই দৌড়ায়। জীবনের জন্য রিজিক অথচ এই রিজিকর জন্য অনেকের জীবন পর্যন্ত চলে যায়। সবার রিজিক কিন্তু সমান নয়। কেউ হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে লবণ আনতে পান্তা ফুরায়। আবার কেউ উত্তরাকিার সূত্রে পাওয়া সম্পদ বসে বসে খায়। সবাই সমান রিজিক উপার্জন করতে পারে না। আল্লাহপাকের হিকমতের দাবীও তাই। কারণ সবার রিজিক যদি সমান হয়, সবাই যদি সমান অর্থ-সম্পদের মালিক হয়, তাহলে দুনিয়ার আবাদ ও বিশ্ব পরিচালনা ব্যাহত হবে, পৃথিবী স্থবির হয়ে পড়বে। তাই এর বণ্টন আল্লাহপাক নিজ দায়িত্বে রেখেছেন। তিনি নিজ হিকমত ও প্রজ্ঞানুযায়ী সবার মাঝে তা বণ্টন করেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

“অতঃপর যখন নামাজ সমাপ্ত হবে, তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ, রিজিক তথা জীবিকার সন্ধান করবে।” সূরা জুমুআহঃ ১০

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

“তোমরা যদি সঠিকভাবে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে তবে তিনি তোমাদেরকে রিযিক দান করতেন- যেমন পাখিকে রিযিক দান করে থাকেন- তারা খালি পেটে সকালে বের হয় এবং পেট ভর্তি হয়ে রাতে ফিরে আসে।” (আহমাদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনু মাজাহ্)

উল্লেখ্য, সরকারের বাজেট পাশ হয় সংসদে আর রবের বাজেট পাশ হয় আসমানে। অতএব রিজিক বাড়ানোর জন্য আগ্রহী প্রার্থীকে অবশ্যই আসমানে দরখাস্ত করতে হবে। রিজিক বৃদ্ধির হাতিয়ার, মহান রবের দরবারে দোয়া ও ইস্তিগফার। সরকারী বাজেট বিভিন্ন এজেন্সি ও সংস্থার মাধ্যমে সরকার জনগণের মাঝে পৌছেঁ দেন। অনুরূপভাবে আল্লাহপাক সৃষ্টিজগতের বাজেট সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর কাছে পৌছাঁন। এ হচ্ছে বিধাতার বিধান। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও এজেন্সি সরকারী বাজেটের মালিক নয় বরং বাহকমাত্র, মালিক হচ্ছে সরকার। অনুরূপভাবে সৃষ্টিজগত হচ্ছে মাধ্যম তথা বাহকমাত্র। রিজিক তথা জীবিকার প্রকৃত মালিক হচ্ছে রায্যাক, রব তথা মহান আল্লাহ। হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেন,

“সেই ব্যক্তি সফলকাম, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, আর তাকে পরিমিত জীবিকা দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহপাক তাকে যা দিয়েছেন তাতে সে সন্তুষ্ট।” সহি-মুসলিমঃ১০৫৪

জীবিকা তথা রিজিক কোনো সম্মান বা মর্যাদার মাপকাঠি নয়। আবার হতভাগা বা অশুভ লক্ষণের আলামতও নয়। কী অনুগত! কী অবাধ্য! কী মুমিন! কী কাফের! কী ভাল! কী মন্দ! সবাইকে জোয়ার ভাটার ন্যায় প্রাচুর্র্য ও অভাব, সুখ ও দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে। এর মাধ্যমে আল্লাহপাক অবাধ্য ও কাফেরকে অবকাশ দেন আর অনুগত ও মুমিনের পরীক্ষা নেন। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন,

“যদি আল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমান দুনিয়ার মূল্য থাকত, তাহলে তিনি কোনো কাফেরকে এক ঢোক পানিও পান করাতেন না। ” তিরমিজিঃ ২৩২০

অন্য হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেন,

“প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফিতনা রয়েছে, আমার উম্মতের ফিতনা হচ্ছে মাল”-তিরমিজিঃ ২৩৩৬।

আরেক হাদিসে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন,

“ ছাগলের পালে দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছেড়ে দিলে ছাগলের যতটা ক্ষতি করে, দ্বীনের জন্য তার চেয়ে বেশি ক্ষতিকারক হচ্ছে সম্পদ ও সম্মানের প্রতি লোভ-লালসা। ” তিরমিজিঃ ২৩৭৬

হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেন,

“মুমিনের বিষয়টি আশ্চর্যজনক, তার প্রত্যেকটি বিষয় কল্যাণকর, এটা মুমিন ব্যতীত অন্য কারো ভাগ্যে নেই, যদি তাকে কল্যাণ স্পর্শ করে, আল্লাহর শোকর আদায় করে, এটা তার জন্য কল্যাণকর, আর যদি তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে ধৈর্য ধারণ করে, এটাও তার জন্য কল্যাণকর।”- মুসলিমঃ ৫৩২২

প্রাচুর্য ও সচ্ছলতার সময় একজন মুমিন যাকাত-সাদকা প্রদান করে আল্লাহর শোকর আদায় করবে। অভাব ও অসচ্ছলতার সময় ঈমান ও ধৈর্যের পরিচয় দেবে। সুতরাং অভাব ও প্রাচুর্য উভয় মুমিনের জন্য কল্যাণকর ও মঙ্গলজনক।

বুখারী শরীফে ‘আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সত্যবাদী স্বীকৃত রাসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“প্রত্যেকেই আপন মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত শুক্রানু হিসেবে জমাট থাকে। তারপর চল্লিশ দিন রক্তপিন্ড। তারপর চল্লিশ দিন গোশত পিন্ডাকারে থাকে। তারপর আল্লাহপাক একজন ফেরেশতা পাঠান তার জন্য চারটি বিষয় লিখে দেয়ার দেওয়ার জন্য। তার রিজিক কী হবে, তার মৃত্যু কবে হবে? সে কী দুর্ভাগা হবে, নাকি সৌভাগ্যবান হবে।”- সহিহ বুখারীঃ ৬৫৯৪

আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি তোমার পালনকর্তার অনুগ্রহ বণ্টন করে? আমিই তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি পার্থিব জীবনে এবং তাদের একজনের মর্যাদা অন্যজনের ওপর উন্নীত করেছি, যাতে তারা একে অন্যকে সেবকরূপে গ্রহণ করতে পারে।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৩২)

সাধারণ মানুষ মনে করে, রিজিক বা জীবিকা আসে চাকরি, ব্যবসা বা চাষাবাদের মাধ্যমে। কিন্তু কোরআনের ঘোষণা হলো,

“রিজিকের সিদ্ধান্ত হয় আসমানে। আল্লাহ বলেন, ‘আকাশে রয়েছে তোমাদের রিজিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২২)

ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত, রাসূল(সাঃ) বলেন, “জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলা কিংবা সত্য কথা বলার সময় কারো ভয় পাওয়া উচিত নয়, কারণ এর মাধ্যমে না আয়ু কমে যাবে, না তাকে তার রিজিক থেকে দূরে সরিয়ে দিবে।”- বায়হাকি

অন্যদিকে মৃত্যু থেকে বাচাঁর জন্য মানুষ এমন কোনো পথ, পদ্ধতি ও কৌশল নেই যা অবলম্বণ করে না। অথচ আজ পর্যন্ত কেউ কী মালাকুল মাওত তথা আজরাইল (আঃ) এর হাত থেকে বাচঁতে পেরেছে? মৃত্যু থেকে বাচাঁর জন্য মানুষ কত চেষ্টাই না করছে! প্রাণপন চেষ্টা করেও রবের নির্ধারিত মৃত্যু থেকে কেউ রেহাই পাইনি এবং পাবেও না। অতএব, চিরসত্য রিজিক ও মৃত্যু এ দু’টি বিষয় বান্দার ইচ্ছাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীণ নয়। তা একমাত্র মহান রব তথা প্রতিপালকের হাতে। এটি বিধাতার শাশ্বত বিধান। তারই নিয়ন্ত্রণাধীণ ও ইচ্ছাধীন। আল্লাহপাক জন্মের আগেই জীবিকা নির্ধারণ করে রেখেছেন। আল্লাহপাক জন্মের আগেই আমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করে রেখেছেন। আল্লাহপাক জন্মের আগেই মৃত্যুর সময় ও স্থান অবধারিত করে রেখেছেন। অতএব, যে বিষয়টি হাতের নাগালের বাইরে, নিজ ইচ্ছাধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীণ নয়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা, হতাশা ও অনুশোচনা কখনো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না।

মৃত্যু এমন এক বিষয় যার হাত থেকে পলায়ন করার সাধ্য কারো নেই। এ কথা বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহতায়ালা যার মৃত্যু যেখানে নির্ধারিত করে রেখেছেন, সেখানেই তাঁর মৃত্যু হবে। মৃত্যু যে নির্ধারিত সময় ও স্থানে সুনিশ্চিত তা হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের যুগে তাঁর নিজের এক মন্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়।

হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম নিজের এক মন্ত্রীর সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন। এমন সময় খুব সুন্দর চেহারা ও দামি পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি সুলাইমান আলাইহিস সালামের মজলিশে প্রবেশ করল এবং কিছুক্ষণ বসার পর চলে গেল। তাঁর যাওয়ার পর মন্ত্রী হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর নবী! এ মাত্র আপনার নিকট যে লোকটি এসেছিলে, সে কে? হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম বললেন, সে ‘মালাকুল মাউত’ অর্থাৎ মৃত্যু ফেরেশতা। মালাকুল মাউত এর নাম শুনে মন্ত্রীর চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং শরীর কাঁপতে থাকে আর বলতে থাকে, হযরত অনুগ্রহ করে বাতাসকে হুকুম দেন, বাতাস যেন আমাকে হিন্দুস্তানে (সেখান থেকে অনেক দূর) পৌঁছে দেয়। কারণ আমার জন্য অসম্ভব যে, আমি ঐ জায়গায় বসি যেখানে মৃত্যুর ফেরেশতা বসেছে।

হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম মন্ত্রীর আবেদন মঞ্জুর করে বাতাসকে নির্দেশ দেন, মন্ত্রীকে হিন্দুস্থান পৌঁছে দেয়ার জন্য। সাথে সাথে বাতাস নির্দেশ মোতাবেক তাই করল। একটু পরে পুনরায় মৃত্যুর ফেরেশতা সুলাইমান আলাইহিস সালামের নিকট উপস্থিত হয়ে বলল হে আল্লাহর নবী আপনার মন্ত্রী কোথায়? হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম জানালেন, আপনার ভয়ের কারণে বাতাস তাঁকে হিন্দুস্থানে পৌছে দিয়েছে। মৃত্যুর ফেরেশতা বলল, কিছুক্ষণ পূর্বে আমি যখন আপনার মজলিসে এসেছিলাম, তখন ঐ মন্ত্রীকে দেখে আশ্চর্য হয়েছিলাম! কেননা আল্লাহ তায়ালা আমাকে আদেশ দিয়েছেন যে, হিন্দুস্তান থেকে তার রূহ কবজ করার জন্য। আমি এসে দেখলাম সেই ব্যক্তি হাজার মাইল দূরে আপনার নিকট বসে আছে? সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর কী অপার মহিমা! মৃত্যুর সময় এবং স্থান পরিবর্তন হয় না। মৃত্যুর ফেরেশতা আরো বলেন, আমি নির্দিষ্ট সময়ে হিন্দুস্তান পৌঁছি তখন আপনার মন্ত্রী হিন্দুস্তানে উপস্থিত! তার রূহ কবজ করে পুনরায় আপনার নিকট ফিরে আসলাম।

এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট মৃত্যু অবধারিত সত্য। আমরা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছি। মৃত্যুর পথে ধাবিত হচ্ছি। আমরা সবাই মৃত্যুযাত্রী। এক ফারসী কবি বলেনঃ “দু’টি জিনিস মানুষকে সর্বদা টানে/ এক. রিজিক দুই. কবর পানে।

সবাইকে মৃত্যুর উন্মুক্ত দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। আমাদের মম চিত্তকে পরিশুদ্ধ করা প্রয়োজন। পরকালে সুখ-শান্তিতে থাকার উপকরণ সংগ্রহ করা আবশ্যক। মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করা দরকার। প্রত্যেকটা কাজের প্রারম্ভে করোটিতে মৃত্যু নামক বাস্তব চিত্র আঁকা জরুরী। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেন,

দুনিয়ার স্বাদকে বিলুপ্তকারী মৃত্যুকে তোমরা বেশি বেশি স্মরণ করো।- তিরমিজিঃ ২৩০৭

নশ্বর পৃথিবীর শাশ্বত চিরন্তন সত্য হলো মৃত্যু। মৃত্যুর চেয়ে অপরিবর্তনীয় শব্দ জগতের অভিধানে খুব কম। রসায়নে বলা হয়, “বস্তু নিঃশেষ হয় না, রূপ পালটায়”। কীভাবে মানুষের রূপান্তর ঘটে তা একটু ভেবে দেখলেই পরিস্কার বুঝা যায়। আমাদের প্রথম ঠিকানা যথাক্রমে “আ’লমে আরওয়াহ” তথা রূহ জগত। সেখান থেকে মায়ের পেট। মায়ের পেট থেকে দুনিয়ার পিঠ। দুনিয়ার পিঠ থেকে দুনিয়ার পেট। দুনিয়ার পেট থেকে কিয়ামতের মাঠ। কিয়ামতের মাঠ থেকে সর্বশেষ ঠিকানা জান্নাত বা জাহান্নাম। এভাবে মানুষের স্থান পরিবর্তন হতে থাকে। অতএব, মানুষ মরে গেলেই শেষ হয় না বরং স্থানান্তর হয় মাত্র। নতুন করে বরজখ জীবন শুরু হয়।

মানুষ মরণশীল। তবে মরণই সবকিছু শেষ নয়। রূহ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

“রূহ হল তোমার প্রভুর আদেশমাত্র। এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্যই জ্ঞান দেয়া হয়েছে।” সূরা আল-ইসরাঃ ৮৫।

আল্লাহর আদেশে রূহ প্রদান করা হয়েছে আবার আল্লাহর আদেশেই রূহ প্রত্যাহার হবে। আল্লামা ইকবাল বলেন, “মৃত্যু অবিনশ্বর জীবনপথের ফজরবেলা”। শেষ বিচারের পর জান্নাত ও জাহান্নামই হচ্ছে শেষ পরিণতি, চুড়ান্ত জীবন ও স্থায়ী ঠিকানা! এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

এই পার্থিব জীবন ছলনাময়, প্রতারণার সামগ্রীমাত্র। পরকালের জীবনই আসল জীবন, প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত!-সূরা আল আনকাবুত : ৬৪।

বিদেশে গিয়ে নিজ দেশ, মাতৃভূমি ও জন্মভূমির কথা ভুলে যাওয়া কখনো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। অনুরূপভাবে ক্ষণস্থায়ী সুখ-শান্তির পিছনে পড়ে চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির কথা ভুলে যাওয়া কখনো সচেতনতার পরিচয় বহন করে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেন,

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে গাফেল না করে, আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসিন না করে। আর যারা উদাসিন হয়, আল্লাহকে ভুলে যায় তারাই হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। আর আমি তোমাদের যে জীবিকা (রিজিক) দিয়েছি তা থেকে ব্যয় কর মৃত্যু আসার আগে। অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছু সময়ের জন্য অবকাশ দিলে, আমি সাদকা করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অর্ন্তভূক্ত হতাম। কিন্তু নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহপাক কাউকে অবকাশ দিবেন না।” – সূরা মুনাফিকুনঃ ৯-১১

সফলতা ও ব্যর্থতা এ দু’টি শব্দ এখন সর্বত্রই খুব বেশি প্রচলিত। সচেতন মানুষ এ দুটি শব্দ নিয়ে খুব বেশি গবেষণা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে। চুড়ান্ত সফলতার একটি সূত্র ও মাপকাটি আল্লাহপাক মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বর্ণনা করেছেন। আসুন, আমরা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত সূত্রের কষ্টিপাথরে যাচাই করি, আমাদের জীবন কী সফল! নাকি ব্যর্থ! পবিত্র সংবিধান, মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, সব সমস্যার সমাধানঃ

“প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কিয়ামতের দিন, তোমাদের কর্মফল তথা প্রতিদান দেয়া হবে। তখন যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সেই প্রকৃত সফলকাম।”-৩ : ১৮৫

পরিশেষে সবাইকে ইহজগত ছেড়ে পরপারে যেতে হবে এটিই চুড়ান্ত, খাটিঁ ও বাস্তবতা। আল-কুরআনে আল্লাহপাক বলেন,

“প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা কবরে উপস্থিত হও।”- সূরা আত্-তাকাছুর।

রাসূল (সাঃ) বলেন, “আখেরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন।”-বুখারীঃ ২৮৩৪

স্বভাবগতভাবে মানুষের মধ্যে তাড়াহুড়া করার প্রবণতা আছে। সে দ্রুত সব কিছু পেতে চায়। সব কিছু ভোগ করতে চায়। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম হলো, নির্ধারিত সময়ে ধীরে ধীরে জীবনোপকরণ হাতে আসে। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, নির্ধারিত জীবিকা আসবেই। কেউ তার রিজিক ভোগ না করে মৃত্যুবরণ করবে না। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন,

‘হে মানুষ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ধনসম্পদ সংগ্রহে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। কেননা কেউ তার রিজিক পরিপূর্ণ না করে মৃত্যুবরণ করবে না, যদিও তা অর্জনে বিলম্ব হোক না কেন।’ (ইবনে মাজাহ)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা