আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যুগ যুগ ধরে অন্ধকারের অতল গহবরে নিমজ্জিত মানবজাতিকে পথ প্রদর্শনের জন্য তাঁর পয়গম্বরদের প্রেরণ করেছেন। সর্বশেষ পয়গম্বর হযরত মুহম্মদ (সা.) এরপর এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তাঁর অলি, গাউস ও কুতুবগণ। হযরত রাহাত আলী শাহ (রহ.) এমনই একজন অলি, যনি ইসলাম প্রচার ও প্রসারে যথেষ্ট অবদান রেখে গেছেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সাধক হযরত রাহাত আলী শাহ (রহ.) ১৮৬৪-৬৫ খৃস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মধানগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ছিল আইনুদ্দিন মোল্লা এবং মায়ের নাম ছিল আয়না বিবি। পিতা-মাতা উভয়ই ছিলেন খুবই ধার্মিক ও পরহেযগার। বাল্যকাল হতেই হযরত রাহাত আলী শাহ (রহ.)-এর ধৈর্য ও সংযম সবাইকে আকৃষ্ট করে। রাহাত আলী শাহ (রহ.) ছিলেন একজন মানবজাত আলী। কথিত আছে ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই তিনি তাঁর মাকে ধরাধামে আগমনের তারিখ জানিয়ে দিয়েছেন। শৈশবকাল থেকেই তাঁর নানা অলৌকিক কেরামতি প্রকাশ পেতে থাকে। শৈশবেই মসজিদভিত্তিক স্থানীয় মক্তবে তাঁকে ভর্তি করা হয়।
শৈশবকাল থেকেই তিনি ছিলেন শান্ত প্রকৃতির এবং বেশ ধৈর্যশীল। লৌকিকভাবে হাফেজী পড়া না পড়েও তিনি কোরআনে হাফেয ছিলেন। মক্তবে পড়া সম্পন্ন করে তিনি সরাইলের নাসিরনগর মাদরাসা ও ভারতের বিখ্যাত দেওবন্দ মাদরাসায় লেখাপড়া করেন। এ সময় কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার পীর কাশিমপুর গ্রামের হযরত নাজিমুদ্দিন চিশতি (রহ.) তাঁর সহপাঠি ছিলেন। তিনি বলেছেন, মাদরাসার ছাত্র থাকাকালীন সময়ে রাহাতের মধ্যে তিনি অলৌকিক কার্যক্রম দেখতে পান। রাহাত সময়মতো ক্লাসে যেতেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই দেখতে পেতেন রাহাতের বসার স্থানটি শূন্য-টেবিলে কেবল বইখাতা পড়ে আছে। কিন্তু শিক্ষক ও ছাত্ররা এ ঘটনা টের পেত না। অন্য এক সূত্রে জানা যায়, এ সময়ে অলৌকিকভাবে রাহাত পাকিস্তানের এক মাদরাসায় অধ্যয়ন করেছেন। রাহাত যখন জামাতে উলার ছাত্র ঠিক সে সময় লজিং বাড়িতে তিনি থাকতেন এবং সে সময়ই তাঁর অলৌকিক রূপটি প্রকাশ পেয়ে যায়।
একদা লজিং মাস্টার অমাবস্যার রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হয়ে দেখতে পান, আকাশ থেকে একটি নূরের বিশাল রশ্মি যেন রাহাতের ঘরটিকে আলোকিত করে রেখেছে। আকাশ এবং মর্তের মধ্যে তৈরি হয়েছে নূরের পথ। আর রাহাত জিকিরত অবস্থায় সেই জ্যোতির্ময় ঘরে দাঁড়িয়ে আছে। লজিং মাস্টার ঘরে প্রবেশ করতেই আলো নিভে যায় এবং রাহাতও সেখান থেকে উধাও হয়ে যান। এরপর প্রায় এক যুগ লোকালয়ে তাকে দেখা যায়নি। জানা যায়, এ সময় তিনি ভারতের কোন এক গভীর জঙ্গলে আধ্যাত্মিক ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। কথিত আছে এ সময় তিনি অলৌকিকভাবে হযরত খাজা খিজির (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর কাছ থেকে মারেফাতের উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন।
পরবর্তী সময়ে তিনি অলৌকিকভাবে ইমাম হযরত বড়পীর আবদুল কাদির জিলানী (রহ.), হযরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি (রহ.), হযরত মুজাদ্দেদ আলফেসানী ও হযরত নফসবন্দী (রহ.)-এর দিদার লাভ করে ফায়েজাপ্রাপ্ত হন।
Leave a Reply