নিজেকে কি বিচারের কাঠগড়ায় কোনদিনও দাঁড় করিয়েছি? অনন্ত চাওয়ার শেষ পরিণতি কি- হাবিয়া দোজখ? হাজারবার, লক্ষবার, কোটিবার চিৎকার করে বলছেন কোরান, বাইবেল, তাওরাত, জবুর, বেদ, গীতা, ত্রিপিটক, জেন্দাবেস্তা ধন-সম্পদের মোহ আর মায়া মরণে আনে এর ইতি বা অবসান, তবু কেন এত বড় জলজ্যান্ত সত্য চোখের সামনে দেখেও দেখ না? তবে কি এটাই পুলসিরাত? এটাই কি সেই পথ যার ধার তরবারি হতে অনেক বেশি ধারালো এবং চুলের চেয়ে অনেক সূক্ষ্ণ? হায় রে মানুষ! আমরা জন্মেছি এটা সত্য এবং অবশ্যই মারা যাবো তথা চলে যাবো এটা সত্য আর এর মাঝখানের ছুটাছুটির মূল্য কতটুকু তার হিশাব করুন তো! তবে কোন মোহে, কোন লোভে, কোন স্বার্থে আল্লাহ পাকের পবিত্র বাণীর বুকের উপর দিয়ে হেঁটে যাবার সাহস পাই? তবে কি সেই শয়তান আমার মধ্যেই মিশে আছে? সেই শয়তানের নামই কি আমাদের কলুষিত প্রবৃত্তির অনন্ত চাওয়া? এই অনন্ত চাওয়ার নামই কি জাহান্নাম? যত চাওয়ার পাওয়া না পেলেই কি আবার নতুন চাওয়া হাজির হয় না? এই চাওয়ার কি শেষ নেই? আরও আছে কি? আরও দেবে কি? জাহান্নামও এ রকম ভাষায় চাইছে না কোরান পাকে? তবে জাহান্নাম কী? এর প্রকৃত রহস্যই বা কী? তবে কি আমরা অনেকেই জাহান্নামে আছি না? বাস করছি না? বর্তমান কালকেই কি বোঝানো হচ্ছে? না যাবো বোঝানো হচ্ছে তথা ভবিষ্যতকে বোঝানো হচ্ছে? এই অনন্ত চাওয়ার যদি শেষ না থাকে তবে ইহাই কি হাবিয়া? চাওয়ায় যদি তলা না থাকে তবে হাবিয়ার কি তলা আছে? জাহান্নামের মুকুট হাবিয়ার কোনো তলা নেই – তবে কি অনন্ত চাওয়ার হাবিয়াতে আমরা হাবুডুবু খাচ্ছি না? জেনে শুনেও আমরা প্রবৃত্তির চাওয়া পথকেই সঠিক বলে প্রায় সবাই এগিয়ে চলি এবং তার পরিণতি কত ভয়াবহ, কত করুণ তা এতিম, মিসকিন তথা সর্বহারাদের চাহনি দেখলেই আমাদের ভুল বুঝতে পারি।
কী এক অদৃশ্য রহস্যের অন্ধকারে নিজেকে নিজেই উল্টাসিধা চিন্তার বাঁধনে বেঁধে চলেছি। বুঝতেও পারছি না যে, আমি তো নিজেই নিজের একটি জ্বলন্ত আত্মবিরোধের মূর্তি, দাঁড়িয়ে আছি এই মানবসমাজে। অথচ কী অপূর্ব রূপকথার ভাষায় ঘৃণা করছি আত্মবিরোধকে। নাক সিঁটকাচ্ছি উল্টাপাল্টা চিন্তা ধারার দর্শন অবলোকন করে। কি বিচিত্র উল্টাপাল্টা মতবাদ ঢেকে রাখছি নিজের মধ্যে জাদুর চাদর দিয়ে। নিজের ভেতর নিজেকে তদন্ত কমিশনের প্রধান বিচারক বানিয়ে রিপোর্ট দিতে যদি কেউ আহ্বান জানায় তবে একদম নির্ভুল রিপোর্ট পেশ করতে বিবেক থমকে যায় না, বিবেক প্রতিবাদের প্রশ্নে ভাষার জিহ্বা পালন করে বোবার ভূমিকা। আমার মন, আমার বিবেকের সত্তা, আমার এদিক-সেদিকে ঘোরানো ক্যামেরার মতো অনেক ছবি তোলার চোখ দুটো, আমার কম্পিউটারের হিশাব মেলানো মগজের ভেতর খুঁজে বেড়াই কোথায় মীরজাফরের দল, কোথায় ভণ্ডের দল, কিন্তু একবারও কি নিজেকে নিজে দেখতে চেষ্টা করছি? একবারও কি নিজেকে নিজে চিৎকার করে ঘোষণা করতে পেরেছি যে, মীরজাফর, ভণ্ড আর বেইমান যে আমি নিজেই হয়ে আছি অনেক আগে, কিন্তু একটা সামাজিক চাহনির লজ্জায় তা ঢেকে রাখতে বাধ্য হয়েছি। কারণ, যুক্তি হিশাবে অপরাধ স্বীকার করেও একটি খোঁড়া যুক্তি তবু দাঁড় করিয়ে ছাড়ি আর সেই যুক্তিটির শেষ ভাষা হলো মানুষ লাঠির ভয়ে আত্মহত্যা করে না, আত্মহত্যা করে লজ্জার ভয়ে ।
Leave a Reply